ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা
by Kabir Mandal
Posted on November 8, 2018, 8:37 pm
এই মাসের প্রথম থেকেই একটা অদ্ভত অস্থিরতা কাজ করছিল। অস্থিরতাটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে গত সপ্তাহ থেকে। জীবনে কখনও এমন অবস্থা অনুভব করিনি, সময় অনুযায়ী যত ধরনের ডিজাস্টার পার করেছি, প্রতিটাকেই মনে হয়েছে এই বোধহয় জীবনের শেষ। ছোট বেলা থেকেই আমার মধ্যে একটা প্রবনতা ছিল, কোন কিছু না পারলে আস্তে করে কেটে পড়া। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাই করেছি। খেলাতে না পারলে আস্তে করে সরে এসেছি, কারও সাথে ঝগড়া তে পেরে না উঠলে জাস্ট গিভ আপ বলে কেটে পড়েছি। পরীক্ষায় ফেল করেছি বলে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছি। খুব ভালো করে পড়ব বলে আবার শুরু করেছি, কয়েকদিন পর আবার যেই লাউ সেই কদু টাইপ জীবনে ফিরে গিয়ে, বারবার ষোল টাকা দরের চালের মত নিজের জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছি। মোদ্দা কথা সবাই যেটাকে ছোট্ট করে বলে ‘ল্যাক অফ ডিটারমিনেশন’। দেখছেন টার্মটা আমি জানি, এই যে এখন যে হেডলাইনটি লিখেছি, কিন্তু ভেতরে লিখতে বসে শব্দ অন্য দিকে নিয়ে গেছে নিজেকে। সবাই বলবে তোমার আজকের যা অবস্থান তার জন্য তুমিই দায়ী। অবশ্যই এটা সহস্রভাগ সত্য। কোন এক্সকিউজে জীবনের এতগুলো বছর ফিরে আসবে না। প্রথম লাইনটার কারন নিশ্চই জানার অাগ্রহ তৈরী করতে পারে। সেই কারনটা হলো খুব ভালো বন্ধু ছিল যে একসময়, যাকে ভালোবাসতাম একসময় ( হয়তো এখনও বাসি) তার বিবাহ। যতটা না বন্ধুর বা প্রাক্তন প্রেমিকের বিয়ে নিয়ে কষ্ট পেয়েছি, তার চাইতেও বেশি অনুভব করেছি যাকে সে বিয়ে করেছে তার প্রতি ঘৃনা। সে বন্ধু চলে গেছে জীবন থেকে আরও কয়েক বছর আগে। বছরখানেক আগে ভাবলাম মাফ করে দেই। কারন শত হলেও সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু যেই মেয়েটার কারনে আমার বন্ধু প্রেমিক চলে গেছে, এবং যেই মেয়েটা জেনেশুনেও এই কাজটা করেছে, তার প্রতি যে এতটা ঘৃনা আমি পুষে রেখেছি সেটা আবিষ্কার করেছি কয়েকদিন আগে। নিজের প্রতি এক ধরনের রাগ, অসাড়তা তে গত ৫ দিন একটি ঘরে নিজেকে বন্দি করেছি। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম, যেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি, কম করে হলেও প্রতিদিন ১৪/১৬ ঘন্টা। প্রতিদিন ৩ টা করে রোমান্টিক সিনেমা দেখা। সোস্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা এবং পর্যাপ্ত পরিমানে মদ্যপান করে কান্নাকাটি করা। নিজেকে এতটা অসহায় মনে হয়নি এর আগে কখনও। কিন্তু আমি জানি, আমার পক্ষে এই বিলাসীতা করা আর সম্ভব না। হয়তো এ করতে করতে চাকরিটা চলে যাবে। পেটে ভাত জুটবে না। তাই আমি জানি আমাকে ফিরতেই হবে স্বাভাবিক রুটিন জীবনে। এই লেখাটি লেখার আগে দিয়ে একটি সিনেমা দেখছিলাম “ হোমলেস টু হার্ভার্ড” লিজ মুরারি নামের একটি মেয়ের গল্প। সিনেমাটি দেখে মনে হলো এই তো আমি ভালো আছি, মেয়েটির মায়ের মৃত্যুর দৃশ্যে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছি, নিজের মায়ের মৃত্যুর সময়টাকে মনে করে। পরে তার একটা স্পিচ দেখতে দেখতে জানতে পারলাম বেন আন্ডারউড এর কথা। সেই অন্ধ ছেলেটা, যে কিনা কোনদিন নিজেকে অন্ধ ভাবেনি, ভেবেছে সে স্পেশাল। এরা সবাই বেঁচে ছিল যতটুকু সময় থাকার। আর আমি ?? বেঁচে আছি শুধু অন্য কারো জীবনে নিজের প্রায়োরিটি খোজার জন্য ? আমি জানি আমি হয়তো আবার যেই লাউ বা কদুতে পরিনত হব কাল সকালেই। ল্যাক অফ ডিটারমিনেশন এর কল্যানে। তবুও এটা লেখা এই জন্য যে কোন একদিন নিজেকে মনে করিয়ে দেয়া, কয়েক মুহুর্তের জন্য হলেও আমার ঘুরে দাড়ানোর ইচ্ছে হয়েছিল।